IQNA

সৌদি আরবে হাজার বছরের পুরনো সমুদ্রবন্দর

4:02 - November 12, 2023
সংবাদ: 3474642
তেহরান (ইকনা): আল উকাইর সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আল আহসায় অবস্থিত প্রাচীন সমুদ্রবন্দর। এটিকে পারস্য উপসাগরের প্রাচীনতম সমুদ্রবন্দর মনে করা হয়। নিকট অতীতে উসমানীয় শাসকরা আল উকাইরে বন্দরের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন এবং তাঁরা এখানে শুল্কঘর, সরাইখানা, গুদামঘরসহ বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। তবে এর ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো।

এটি ছিল পারস্য উপসাগর থেকে আল আহসার প্রবেশদ্বার। প্রাচীন আফ্রিকা, গ্রিক ও পর্তুগিজ বন্দরগুলোর এর যোগাযোগ ছিল। আধুনিক সৌদি আরবেও আল উকাইরের বিশেষ অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে। সৌদি আরব গঠনের সময় এটিই ছিল দেশটির পূর্বাঞ্চল ও কেন্দ্রে মালপত্র প্রবেশের প্রধান বন্দর।

২০১৮ সালে আল আহসা মরূদ্যানের সঙ্গে সঙ্গে আল উকাইর বন্দরকেও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রাচীনকাল থেকে আল উকাইর বন্দর সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ইরান, ইরাক, ইয়েমেন ও ওমানের ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্য নিয়ে এই বন্দর দিয়েই সৌদি আরবে প্রবেশ করতেন। তাঁদের আনা পণ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল কফি, এলাচ, মসলা, পোশাক, সুগন্ধি, ধূপ ও চন্দন।

তাঁরা প্রথমে আল আহসায় যেতেন এবং সেখান থেকে এসব পণ্য অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ত।  
সৌদি আরবের বর্তমান শাসক পরিবারের কাছে আল উকাইর আরেকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, এখানেই ১৯২২ সালে গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিনিধি স্যার পারসি কক্সের সঙ্গে প্রস্তাবিত ‘কিংডম অব সাউদি আরাবিয়া’-এর পক্ষে আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান আল সৌদি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। উকাইর প্রটোকল নামের সেই চুক্তি আধুনিক সৌদি আরবের সীমানা নির্ধারণে সহায়ক ছিল। আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমানই পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবের বাদশাহ (১৯৩২-১৯৫৩ খ্রি.) হন।

আল উকাইরে বহু প্রাচীন ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। যেমন পুরনো প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, আবাসিক হোটেল, গুদাম ঘর ইত্যাদি। ইসলাম-পূর্ব যুগের দুটি প্রধান বাজার ‘আল মুশাক্কার’ ও ‘হাজার’-ও এখানে অবস্থিত। আল উকাইরের প্রাচীন ভবনগুলোতে গ্রিক স্থাপত্যরীতির প্রভাব দেখা যায়। যেমন : তুর্কিদের নির্মিত সরাইখানা, যা ‘খান’ নামে পরিচিতি। এতে পর্যটক, ব্যবসায়ী ও তাঁদের পশুগুলোর বিশ্রামের সুযোগ ছিল। খান ভবনগুলো মূলত সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত। এগুলোর দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার পর্যন্ত হতো।

আল উকাইরে মুসলিম স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত একটি ছোট দুর্গও আছে। বন্দরে আগমনকারী ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা দুর্গটি নির্মাণ করেছিল। আয়তাকার ছোট এই ভবনের দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। আল উকাইরের সৈকতও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। কেননা এখানকার সাদা নরম বালু এবং সৈকতজুড়ে সবুজের যে সমারোহ দেখা যায় তা সৌদি আরবের অন্য কোনো সৈকতে দেখা যায় না।

তথ্যসূত্র : স্কয়ারকুফিক ডটকম ও বার্ডস অব সৌদি আরাবিয়া

captcha